জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: আমেরিকায় চাকরি বা কাজের খোঁজে যাওয়ার জন্য এইচ-ওয়ান বি ভিসায় (H-1B visa) পরিবর্তন আসতে চলেছে খুব শীঘ্রই। বিশেষ করে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক-নীতির পরে আমেরিকার রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। ফরেন লেবার অ্যাকসেস গেটওয়ে (FLAG) বা ফ্ল্যাগ পুরনো সব ভিসা আবেদনপত্র বাতিল করে দিচ্ছে। একইসঙ্গে মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (USCIS) বিভাগ এই প্রক্রিয়ায় নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চলেছে।
ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর (Tariff on India) কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। ফলে ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ না করাতেই (Russian oil) এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এখানেই থামছেন না তিনি। এবার ভারতের জন্য আরও নিষেধাজ্ঞা (Secondary sanctions) অপেক্ষা করছে বলে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানেই সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘চিন সহ আরও অনেক দেশই রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। তাহলে ভারতকে একা কেন নিশানা করা হচ্ছে?’ এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘সবে মাত্র আট ঘণ্টা কেটেছে। দেখা যাক কী হয়।’ এরপরই হুঁশিয়ারির সুরে তাঁর মন্তব্য, ‘আপনারা আরও অনেক কিছু দেখতে চলেছেন। আরও অনেক নিষেধাজ্ঞা চাপতে চলেছে।’
উল্লেখ্য, এইচ-ওয়ান বি ভিসা হল আমেরিকায় ভাগ্যান্বেষণে যাওয়া বিদেশি দক্ষ কর্মীদের একটি প্রধান ও সহজ রাস্তা। দ্বিতীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আনা নতুন ব্যবস্থায় এই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করা হচ্ছে বলে আমেরিকার দাবি। পাঁচবছরের পুরনো সমস্ত রেকর্ড সিস্টেম থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, এইচ-ওয়ান বি ভিসা সহ সমস্ত অস্থায়ী কর্মী আবেদন যেমন H-1B1, H-2A, H-2B, E-3 এবং পার্মানেন্ট লেবার সার্টিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন (PERM) বাতিলের কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। ফ্ল্যাগ সিস্টেম থেকে এগুলি পরিষ্কার করে ফেলে USCIS যতক্ষণ না নয়া সিস্টেম চালু করছে ততক্ষণ পড়ে থাকবে বিষয়টি।
সাধারণত, H-1B ভিসাধারীরা চাকরি হারানোর পর নতুন চাকরি খোঁজা বা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য ৬০ দিনের গ্রেস পিরিয়ড পান, যা তাদের আইনি সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু, সাম্প্রতিককালে অনেকেই এই গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যেই ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) থেকে NTA পাচ্ছেন, যা অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম ধাপ।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ইউএসসিআইএস (USCIS)-এর বিদ্যমান নীতির পরিপন্থী এবং প্রভাবিত কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও দুর্দশা সৃষ্টি করছে। অনেক কর্মী গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যে স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও এই ধরনের নোটিশ পাচ্ছেন।
এই প্রবণতা দেখে অভিবাসন আইনজীবীরা H-1B ভিসাধারীদের যত দ্রুত সম্ভব স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার, সমস্ত নথিপত্র এবং রসিদ যত্ন সহকারে রাখার, ডাক এবং ইউএসসিআইএস-এর কেস স্ট্যাটাস নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার এবং NTA পেলে অবিলম্বে আইনি পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
বর্তমানে H-1B ভিসাধারীরা প্রায়শই চাকরি হারানোর ৬০ দিনের গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যেও 'নোটিস টু অ্যাপিয়ার' (NTA) পাচ্ছেন, যা তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। সাধারণত, এই গ্রেস পিরিয়ড কর্মীদের নতুন চাকরি খোঁজা বা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য সময় দেয়, কিন্তু এই নোটিশের কারণে তাঁদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা ইউএসসিআইএস (USCIS)-এর প্রচলিত নীতির পরিপন্থী। অনেক কর্মী গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যে স্ট্যাটাস পরিবর্তনের আবেদন করার পরেও এই ধরনের নোটিশ পাচ্ছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই অবস্থায় অভিবাসন আইনজীবীরা H-1B ভিসাধারীদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
১. দ্রুত ব্যবস্থা নিন: যত দ্রুত সম্ভব স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য আবেদন করুন।
২. নথিপত্র সংরক্ষণ করুন: সমস্ত নথিপত্র এবং আবেদনপত্র জমা দেওয়ার রসিদ যত্ন সহকারে রাখুন।
৩. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ইউএসসিআইএস-এর কেস স্ট্যাটাস এবং আপনার মেইল নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৪. আইনি পরামর্শ: যদি আপনি NTA পান, তবে অবিলম্বে একজন অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
যদিও এই বিষয়ে ইউএসসিআইএস বা ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS)-এর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তবে এই ঘটনাটি H-1B কর্মীদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
মার্ক জেমস গ্রিনের একটি সাম্প্রতিক পোস্টে মার্কিন কংগ্রেসওম্যান মার্জরি টেলর গ্রিন ভারতীয় H-1B ভিসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যা তার মতে আমেরিকানদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। এই মন্তব্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা বা কাজ করছেন। H-1B ভিসা অনেক ভারতীয় স্নাতকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি F-1 স্টুডেন্ট ভিসা থেকে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (OPT) এবং তারপর দীর্ঘমেয়াদী কাজের অভিজ্ঞতার জন্য H-1B স্পনসরশিপের দিকে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
নয়া এই ব্যবস্থায় কোনও ব্যক্তি একসঙ্গে অনেকগুলি কোম্পানিতে কাজের আবেদন জানাতে পারবে, যেখানে কোম্পানিগুলিরও লোক নিয়োগের জন্য মুক্ত অধিকার দেওয়া হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় কোম্পানিগুলির খরচও বৃদ্ধি পাবে যার অর্থ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের আগের থেকে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। নয়া ব্যবস্থায় চাকরি আবেদন প্রক্রিয়াকেও আরও সহজতর এবং দ্রুত করার প্রক্রিয়া আনা হয়েছে। আদতে মার্কিন প্রশাসনের দাবি হচ্ছে, এই নতুন প্রক্রিয়ায় বিদেশি কর্মীদের বাছাই পর্ব আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছ এবং মজবুত কার্যকরী হবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)