জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতের (India) উপর বিপুল শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump)! রাশিয়া থেকে তেল আর অস্ত্রশস্ত্র কেনার সাজা হিসেবেই তিনি ভারতের ঘাড়ে এই শুল্কবোঝা চাপিয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। নাম না করে এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করলেন রাজনাথ সিং (Rajnath Singh)। এদিকে, খোদ মার্কিন মুলুকেও সমালোচনা হচ্ছে ট্রাম্পের। ট্রাম্পের এক প্রাক্তন সহায়ক (Former US National Security Advisor) বলে দিলেন, ট্রাম্প বিরাট ভুল করেছেন ( Enormous mistake)।
'ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডায়নামিক ইকোনমি'
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবার শুল্ক-ইস্যুতে মুখ খুললেন। তিনি বললেন, বিশ্বে এই মুহূর্তে ভারতের অর্থনীতিই সবচেয়ে ড্যাশিং অ্যান্ড ডায়নামিক। তবে সেটাকে অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। অথচ, এই মুহূর্তে বিশ্বে যদি কোনও দেশ লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায়, তবে তার নাম ভারত! ভারতের লোকজনের দ্বারা ভারতেই তৈরি জিনিসপত্রের বিপুল বাজার। সেটাকে হিংসে করছে অনেকে। এর পাশাপাশি ভেঙ্কাইয়া নায়ডুও বলেছেন, ভয় দেখালেও কোনও কিছুর সামনেই মাথা নত করবে না ভারত! পিছিয়ে আসার কোনও প্রশ্নই নেই!
জন বলটন
আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বলটন শুল্ক-কাণ্ডে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের উপর আমেরিকার এই ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা চাপানোটা আমেরিকার ক্ষেত্রেই বুমেরাং হয়ে যাবে। এটিকে তিনি ট্রাম্পের 'এনরমাস মিসটেক' বলে উল্লেখ করেছেন। আর পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, এর জেরে চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সমীকরণ অনেক বদলাবে।
চিন-ভারত-রাশিয়া
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একরকম সতর্ক করেই বলেছেন যে, এটা কিন্তু দেশের পক্ষে (আমেরিকার পক্ষে) ব্যুমেরাং হয়ে যাবে, সাবধান! একটি ইন্টারভিউতে আমেরিকার প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বলটন বলেন, এবার কিন্তু ভারতের সঙ্গে চিন ও রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভ্যলুমটা বদলাবে। চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক গভীর হবে। কেননা, আমেরিকা যেচে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করল। ট্রাম্প এটা বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, চিনের প্রতি আমেরিকার বায়াসড হওয়ার কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি বলটন।
ট্রাম্পীয় ব্যাখ্যা
সোশ্যালে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছিলেন-- 'মনে রাখতে হবে, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুবই কম। কারণ ওদের শুল্কহার খুব বেশি। তাছাড়াও, ওদের যুদ্ধাস্ত্রের অনেকটাই ওরা রাশিয়া থেকেই কেনে। রুশ শক্তিসম্পদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত এবং চিন। বিশেষ করে সেই সময়ে, যখন কি না সকলে বলছে, রাশিয়ার উচিত ইউক্রেনে গণহত্যা বন্ধ! যাই হোক, এসবের জন্যই ভারত এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তিও পেতে হবে ভারতকে।' যদিও পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। যার জেরে শুল্ক দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ!
ইটের বদলে পাটকেল?
বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করতে আমেরিকার তরফে চূড়ান্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল ১ আগস্ট। তবে নানা জটিলতায় আটকা পড়ে এখনও পর্যন্ত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা হয়ে ওঠেনি ভারতের। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই ভারতের উপর শুল্ক চাপানো হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরিষ্কার বলে দেন-- 'হ্যাঁ এটা হতেই পারে'! পাশাপাশি ট্রাম্প জানান, 'ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। তবে যে কোনও দেশের চেয়ে ভারত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। এটা চলতে পারে না। তাই ভারতের উপর এবার বেশি পরিমাণ শুল্ক চাপাবে আমেরিকা!'
সাজা?
তবে নিছক এই হুঁশিয়ারিতেই থেমে থাকেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুঁশিয়ারি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতের উপর শুল্কের বোঝাও চাপিয়ে দিলেন তিনি। স্রেফ জানিয়ে দিলেন, রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কেনার সাজা হিসেবেই ভারতকে এই অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে! শোনা যাচ্ছিল, বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করতে আগামী ২৫ আগস্ট ভারতে আসছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরেও গিয়েছিল দিল্লি। ট্রাম্প বলে দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গিয়েছে! এর অর্থ, সেটা প্রায় চূড়ান্ত! তা হলে? এখন কী হবে?
শুল্কচাপের মুখে মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য ট্রাম্পের এই খেয়ালি আচরণের কাছে মাথা নত করেননি। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি মোটেই বিষয়টা নিয়ে আপস করবেন না। যেখানে কৃষকদের ঝুঁকি রয়েছে, ডেয়ারি ফার্মগুলির বিপদ রয়েছে, মৎস্যজীবীদের সংকটের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে আপস নয়। হয়তো এজন্য ভারতকে অনেক মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু আমি সেজন্য প্রস্তুত আছি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)