সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ণ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলের অন্দরে সংঘাত ও হিংসার কারণে অভিযোগে খবরে শিরোনামে খালেদা জিয়ার দলের নেতা-কর্মীদের নাম। শুধুমাত্র এপ্রিল ও মে মাসেই র অন্তত সাতজন নেতাকর্মীর মৃত্যুর খবর এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে অর্থাৎ গত অগাস্ট থেকে হিসাব করলে এই সংখ্যাটা দেড়শোরও বেশি।
দলীয় সংঘাতে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও। তাদের দাবি, ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই হিংসা মাত্রা 'স্তিমিত হয়ে এসেছে'। কিন্তু পরিসংখ্যান অন্য কথা বলছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের হিংসা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এগুলোর পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং আধিপত্য সৃষ্টির মতো বিষয় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। তাঁদের মতে, নির্বাচন এগিয়ে এলে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক হিংসার বলি ৩৬ জন। যারমধ্যে বিএনপির দলীয় কোন্দলেই প্রাণ গিয়েছে ২৬ জন। আবার অগাস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে ৭৬ জনের মৃত্য়ুর ঘটেছে, তারমধ্যেও বিএনপির অভ্যন্তরীণ হিংসায় মৃতের সংখ্যা ৫৮।
জি ২৪ ঘণ্টার বাংলাদেশ প্রতিনিধিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংঘাত-হিংসা হচ্ছে না, একথা আমরা বলব না। কিন্তু দেখতে হবে এটাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে কিনা। মোটেই তা হচ্ছে না। জড়িতদের বহিষ্কার করা হয়েছে, পদ স্থগিত করা হয়েছে, শোকজ করা হচ্ছে এবং সেখানে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল, কেউ বাদ যাচ্ছে না'। তাঁর কথায়, 'এত বড় রাজনৈতিক দল প্রায় ১৫-১৬ বছর বাংলাদেশে রাজনৈতিক নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেছে, এলাকা থেকে উচ্ছেদ করেছে, এত বছর পর ফিরে গেছে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে মাত্রাটা অনেক কম এবং ধীরে ধীরে অনেক কমে এসেছে। পাঁচ তারিখের পরের তুলনায় অনেকখানি স্তিমিত হয়ে এসেছে'।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ জি ২৪ ঘন্টাকে বলেন, "১৭-১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি তো ক্ষমতাচর্চা অনেকটাই ভুলে গেছে বলা যায়। এদিকে আবার তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা চেয়ারপার্সন নিষ্ক্রিয়, আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন দেশছাড়া'। তাঁর মতে, 'দলীয় বন্ধন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখেন চেয়ারপার্সন। গ্রেফতার হওয়ার আগে বেগম জিয়া যতদিন সক্রিয় ছিলেন, ততদিন দলের মধ্যে সমস্যা বোঝা যায়নি। কিন্তু তারপর থেকেই দলটি অনেক এলোমেলো হয়ে গিয়েছে'।
তাদের বাইরে যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের মধ্যেও বনিবনার অভাব আছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বিশেষ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় তাদের মধ্যেকার মতপার্থক্যও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যা থেকে বোঝা যায় দলের সংহতিতে টান পড়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়বে নির্বাচনেও। বলেন, 'সামনে যদি নির্বাচন আসে, তখন এই নির্বাচন নিয়েও কিন্তু তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে চলে যাবে। কারণ প্রত্যেকেরই নিজস্ব বলয় আছে। অনুগত লোকেরা আছে। তারা সবাই প্রার্থী হতে চাইবে। ফলে যারা অনেকদিন ধরে রাজনীতির মধ্যে ছিলেন, তাদের দখল এবং অর্থনৈতিক লাভ - একইসাথে সম্ভাব্য যে সামনের সময় তার ওপরে নিয়ন্ত্রণের জন্য এই হিংসার ঘটছে'।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)