জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ইরানের পরমাণু প্রকল্পের জন্য আবশ্যিক ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্র। রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) এই তিন পরমাণুকেন্দ্রেই হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। পরে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ওই তিন পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করতে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি পর্যবেক্ষণ সংস্থা
এই সংস্থা জানিয়েছে যে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে মার্কিন হামলার পর সাইটের বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের "সাহসী সিদ্ধান্তের" প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে ইসরায়েল এবং আমেরিকা "পূর্ণ সমন্বয়" করে কাজ করেছে। ইরান বলেছে যে ১৩ জুন ইসরায়েল তাদের আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কমপক্ষে ৩,০৫৬ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলে, ইরানি হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছে।
আমেরিকার হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ:
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফোরডোতে ছ’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ ফেলা হয়েছে। জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) নামেও পরিচিত এই বোমা। তা ফেলার জন্য বি ২ স্পিরিট বোমারু বিমানকে ব্যবহার করেছে আমেরিকা, যে বিমান ১৫ টন ওজনের বোমা বহনে সক্ষম। শুধু ‘বাঙ্কার বাস্টার’ই নয়, আমেরিকার নৌবাহিনীও ‘টোমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েও নাতান্জ় এবং ইসফাহান পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার পরে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিন কেন্দ্রই ধ্বংস ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই দাবি সপক্ষে সে রকম কোনও তথ্যপ্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। পরে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের আধিকারিকেরা রবিবার সকালে (আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী) জানিয়েছেন, তিন পরমাণুকেন্দ্রেরই বড় ক্ষতি হয়েছে।
নাগরিকদের চিন্তার কোনও কারণ নেই:
কিন্তু ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা বুঝতে আরও সময় লাগবে। মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিক স্বীকার করে নিয়েছেন, পাহাড়ে ঘেরা মাটির প্রায় ৩০০ ফুট নীচে থাকা ফোরডোর পরমাণুকেন্দ্রটি তাঁরা ধ্বংস করতে পারেননি। তবে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। ইরান অবশ্য জানিয়েছে, আমেরিকা হামলা চালালেও তিন পরমাণুকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। ফলে নাগরিকদের চিন্তার কোনও কারণ নেই।
আমেরিকার হামলার ছক:
ঘটনাচক্রে, আমেরিকার হামলার ঠিক আগেই কিছু তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছিল ইরানের ফোরডোর ওই পরমাণুকেন্দ্রে। রবিবার তারই উপগ্রহচিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ম্যাকসার’-এর এক বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, আমেরিকার হামলার দু’দিন আগেই কিছু অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছিল ফোরডোর পরমাণুকেন্দ্রে।
পরমাণুকেন্দ্রটির যে জায়গায় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, সেই রাস্তায় ১৬টি মালবাহী ট্রাক দেখা গিয়েছিল গত ১৯ জুন। পরের দিনের উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি ট্রাক উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও এক কিলোমিটার মতো সরে গিয়েছে। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি ট্রাক এবং বুলডোজ়ার দেখা গিয়েছে পরমাণুকেন্দ্রে ঢোকার মুখে।
ইরানের প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি:
ট্রাম্পেরও হুঁশিয়ারির পরেও ইরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা দমে যাবে না। প্রতিশোধ তারা নেবেই। বিবৃতি প্রকাশ করে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড জানিয়েছে, আমেরিকার পালানোর পথ নেই। তেহরানেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
এমন জবাব দেওয়া হবে যে অনুশোচনায় ভুগবে আমেরিকা! ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘‘গত সপ্তাহে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার আগে ইজ়রায়েল হামলা চালিয়েছিল। এ বার আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাঝে হামলা চালাল আমেরিকা। এর থেকে কী প্রমাণিত হয়?’’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)