জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান (Pakistan Chief Marshal) আসিম মুনীরের (Asim Munir) মন্তব্য নিয়ে কড়া বার্তা দিল নয়াদিল্লি। সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ নিয়ে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়ালও। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের পরমাণু হুমকির (Pakistan Nuclear Threat) সামনে মাথা নত করা হবে না। সেই সঙ্গে ‘বন্ধু দেশের’ মাটি থেকে এমন বার্তা দুর্ভাগ্যজনক বলেও জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতের বক্তব্য:
'পরমাণু অস্ত্রধারী একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন দেশ পাকিস্তান।' পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনীরের হুমকির জবাবে এই কথাই বলেছে ভারত। সোমবার ভারত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, আসিম মুনীর যে অর্ধেক পৃথিবীকে ধ্বংস করে ডুবব এবং সিন্ধু নদের জল নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাতেই বোঝা যায় দেশটি একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন দেশ যাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এমনকী পরমাণু অস্ত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে অর্থাৎ সেনাবাহিনীর হাতে চলে যাওয়াকেও ‘প্রকৃত বিপদ’ বলে মনে করে ভারত।
সূত্রের মতে, মুনীরের বক্তব্য এ ধারারই একটা অঙ্গ যে, যখনই আমেরিকা তাদের পাকিস্তানে সেনাকে প্রশংসা করেছে, তখনই ওরা ওদের সত্যিকারের রং প্রকাশ করেছো। আসলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র নেই এ ধরনের আচরণে তা বোঝা যায়। পাকিস্তান আদতে সেনা নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি দেশ।
কী বলেছিলেন মুনীর?
পাকিস্তানে ভারতের সেনা অভিযান 'অপারেশন সিঁদুর' এবং তৎপরবর্তী দুই দেশের সংঘাতের পরে দু'মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমেরিকায় গিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান। ফ্লরিডার টাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদ আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বলেন, 'আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।' পর্যবেক্ষকদের মতে, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃতীয় কোনও দেশকে এ হেন পরমাণু হুমকির নজির বিরল।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি:
এর পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মুনীর। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত। সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল কী ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে, এই চুক্তির শর্ত তা স্থির করে। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা— এই তিন নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত চুক্তির শর্ত না মানলে পাকিস্তানে জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মুনীর বলেন, 'ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।' তাঁর আরও দাবি, 'সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।'
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য:
প্রসঙ্গত, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানের অপ্রশাসনিক শক্তিতে সাবধান করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে বাইরে থাকা এইসব শক্তি পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ছেলেখেলার স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের উপর নজরদারি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ভারতের মতে, পাকিস্তানের বারবার পরমাণু অস্ত্রের হুমকিতেও ভারতের সন্ত্রাস বিরোধী কার্যকলাপ ঠেকাতে পারবে না। পাকিস্তানের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকাটাই এই অবস্থায় বাঞ্ছনীয় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে ভারত। কারণ এরকম পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের দায়িত্ববুদ্ধিহীন ও দুর্বৃত্ত দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর রাখা জরুরি বলে মনে করেন রাজনাথ সিং।
ঘটনার সূত্রপাত:
উল্লেখ্য, আমেরিকায় গিয়ে পরমাণু বোমা (Nuclear bomb) ব্যবহার করে ভারতকে (India) ধ্বংস করার সরাসরি হুমকি দেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনীর (Asim Munir)। মার্কিন সফরে গিয়ে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে মুনীর বলেন, ‘আমরা যদি ডুবে যাই, তবে সঙ্গে অর্ধেক দুনিয়াকেও টেনে নেব।’ মুনীর বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি মনে করি শেষ হয়ে যাচ্ছি, তবে আমরা অর্ধেক দুনিয়াকে শেষ করে দেব।’
সম্প্রতি খনিজ তেল নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সূত্রে পাকিস্তানের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। ইসলামাবাদের উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে দুই দেশকেই বার্তা দেওয়া হল।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)