জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: যুদ্ধের পর বিধ্বস্ত অবস্থায় গাজায়, হাড়হিম দুর্ভিক্ষের (Gaza hunger) ছবি যত্রতত্র। শিশুরা হাসপাতালে পৌঁছচ্ছে মায়ের-বাবার চোখের সামনে ধীরে ধীরে শীর্ণ হয়ে যেতে যেতে — শরীর এমন ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। জীর্ণ পাঁজরের হাড় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, হাত-পা নিস্তেজভাবে ঝুলছে, একসময় যেসব মুখে প্রাণ ছিল, সেখানে এখন ক্ষুধার কুয়াশায় শূন্যতা আর ফাঁপা দৃষ্টি।
আরও পড়ুন, Bangladesh: বাংলাদেশে কবর খুঁড়ে তোলা হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের দেহ!
একই সময়ে, একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ২৪ বছর বয়সি ইসরায়েলি বন্দি এভিয়াতার ডেভিড, যার চোখ ফোসকা পড়া, শরীর ভেঙে পড়া, নিজেই বলছেন তাকে নিজের কবর খুঁড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এই সমান্তরাল চিত্র দুটি একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরে— যেখানে ক্ষুধাকেই যেন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও এক ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে ত্রাণের ট্রাককে ঘিরে কীভাবে জনসমুদ্র।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাবা-মায়েরা গুলির ভয় উপেক্ষা করে খাবার সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, শুধুমাত্র তাদের না-খাওয়া সন্তানদের মুখে কিছু তুলে দেওয়ার জন্য। তবে ইজরায়েলের দাবি, এই ব্যাপক দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী হামাস—যারা নাকি ত্রাণসামগ্রী চুরি করে নিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, "হামাসের দানবরা যেভাবে জিম্মিদের অনাহারে রাখছে, ঠিক একইভাবে নাৎসিরা ইহুদিদের অনাহারে রেখেছিল। হামাস কোনও সমঝোতা চায় না। তারা আমাদের ভেঙে দিতে চায়।"
গাজায় ক্ষুধার জ্বালা মানুষকে হাসপাতালের দ্বারস্থ করছে সামান্য স্বস্তির খোঁজে, অথচ যারা তাদের চিকিৎসা করছেন—সেই চিকিৎসকরাও জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজা থেকে রিপোর্ট করা সাংবাদিকরাও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ছেন—তাঁদের সহকর্মীরা নিজেরাই অনাহারে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। "গাজায় এখন এমন কেউ নেই, যিনি দুর্ভিক্ষের প্রভাবের বাইরে আছেন—আমি নিজেও না," নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এমনটাই জানিয়েছেন ডা. আহমেদ আল-ফাররা।
গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন অনাহারে: জাতিসংঘ
তিনি দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান। তিনি আরও বলেন, "আমি একজন স্বাস্থ্যকর্তা হিসেবে কথা বলছি, কিন্তু আমিও আমার পরিবারের জন্য আটা খুঁজছি।" জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (WFP) এই সপ্তাহে জানিয়েছে, গাজায় ক্ষুধা সংকট "নতুন ও বিস্ময়কর মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ একটানা কয়েক দিন না খেয়ে থাকছেন।" প্রাণধারণের জন্য গাছের পাতা ও দূষিত জলও নাকি খাচ্ছে মানুষ।
যুদ্ধ চলাকালীন সময়জুড়েই জাতিসংঘের সংস্থাগুলি ও স্বাধীন সাহায্য সংস্থাগুলি অভিযোগ করে আসছে যে ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজার দুই মিলিয়ন বাসিন্দার উপর দুর্ভিক্ষের ছায়া নেমে এসেছে। ইসরায়েল পাল্টা দাবি করেছে, তারা যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য ঢুকতে দিচ্ছে এবং অভিযোগ করেছে যে হামাস সেই ত্রাণ সরিয়ে নিচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিতরণব্যবস্থা খুবই দুর্বল।
এটি শুধু বোমা ও গুলির যুদ্ধ নয়। এমনকি যারা যুদ্ধ কভার করছেন সেই সাংবাদিকদের শরীরেও ক্ষুধার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এই যুদ্ধে দুই পক্ষই যুদ্ধের এক আদিমতম নৃশংস উপায়—ক্ষুধা প্রয়োগ করেছে। আলেসিয়ায় সিজারের অবরোধ থেকে বাগদাদে মঙ্গোলদের হামলা, মধ্যযুগীয় অবরোধ থেকে বিশ্বযুদ্ধের অবরোধ পর্যন্ত ইতিহাস জুড়ে ক্ষুধাকে শত্রু দমন করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, Trump Tariffs On India: ভারতের উপর আরও শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)