সেলিম রেজা, ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। শেখ হাসিনা ভারতে আছেন এটা নিশ্চিত হলেও ভারতের কোথায় আছেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য জানা যায়নি। গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই দিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন হয় টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও। জনরোষের ভয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন ৷ এখনো ভারতেই তিনি অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে৷ শেখ হাসিনা ভারতে আছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কারণ শেখ হাসিনা ভারতে আছেন- এটা ভারত সরকার কখনো অস্বীকার করেনি। আবার ভারত থেকে তিনি অন্য কোনো দেশে গিয়েছেন এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান নিয়ে জানেন...তাঁকে এখানে খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে চলে আসতে হয়েছিল প্রধানত সুরক্ষার কারণে। তিনি এখনো সেভাবেই আছেন।’এর আগে শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মধ্যপ্রাচ্যের বা ইউরোপের কোনো দেশে চলে যাওয়ার বিভিন্ন গুঞ্জন বিভিন্ন সময় ওঠে। জানা যায়, ভারতের পার্লামেন্টে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ডা. জন বৃত্তাস ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে কি না। যদি চেয়ে থাকে, তাহলে কী কারণে তাঁকে ফেরত চেয়েছে এবং ভারত সরকারের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে কীর্তি বলেছেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের জবাব দেয়নি ভারত। রণধীর জয়সওয়াল ও কীর্তি বর্ধন সিংয়ের এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে এটুকু নিশ্চিত শেখ হাসিনা এখনো ভারতেই।
তবে তিনি ভারতের কোথায় আছেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেন না ৷ তাঁর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে একাধিক স্থানের নাম শোনা গেলেও কোনোটাই সুনির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করা হয়নি ৷ এ বিষয়ে ভারত সরকার অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেছে ৷ অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশে আছেন হাসিনা, আবার অনেকে বলছেন দিল্লিতে। কেউ কেউ বলছেন, ভারত সরকারের রুটিন অনুযায়ী মাস অন্তর ভারতের মধ্যে একাধিক স্থান পরিবর্তন করেছেন হাসিনা। আবার অনেকেই বলছেন, তাকে সম্প্রতি রাজস্থানে রাখা হয়েছে।
কারও কারও মতে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করছেন। কারণ একাধিক মাধ্যম বলছে, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পলাতক অনেক মন্ত্রী-নেতা কলকাতার সল্টলেক এবং নিউ টাউন অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। ফলে তিনি ওই দুই অঞ্চলের মধ্যে অস্থায়ী অবস্থান করছেন। মনে করা হয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নানা ছক কষতে কলকাতায় একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন হাসিনা। তবে এ নিয়ে নিশ্চিত কেউ বলতে পারছে না। গত বছর ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। সেখানে কিছুদিন ছিলেন। পরে তাকে দিল্লি নিয়ে আসার কথা শোনা যায়।
নয়াদিল্লির একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা দিল্লিতে আছেন। তিনি নয়াদিল্লির লোধি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে একটি সুরক্ষিত বাড়িতে রয়েছেন। ভারত সরকারই তার থাকার জন্য বাড়িটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার মর্যাদা অনুসারে তাকে থাকার জন্য বেশ বড়সড় বাংলো দেওয়া হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের বাংলো ভারতের মন্ত্রী, পার্লামেন্ট সদস্য ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাদা পোশাকে ২৪ ঘণ্টা তার চারপাশে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই পর্যায়ের নিরাপত্তা পাচ্ছেন। নিরাপত্তার খাতিরে যথার্থ প্রটোকল সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে বের হন বলেও জানা গেছে।
তবে ভারতে যাওয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলেছেন ও যোগাযোগ রাখছেন ৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ফোনকলের অডিও রেকর্ড প্রকাশ ও ভাইরাল হয়েছে ৷ যদিও তিনি কেন ভিডিওতে দেখা দিচ্ছেন না বা প্রকাশ্যে আসছেন না, তা নিয়েও নানা আলোচনা-কৌতূহল আছে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতাদের তথ্য মতে, ভিডিওগ্রাফি অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থান স্পষ্ট করে ফেলতে পারে। যে কারণেই হাসিনার কঠোর নির্দেশ, কখনোই ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না। তবে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় গত ৬ জুন দিল্লিতে মায়ের সঙ্গে প্রথম দেখা করেন এবং একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন বলে জানা গেছে। তবে কোথায় তাদের দেখা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এও জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের নভেম্বরের দিকে জয় কলকাতায় আসতে পারেন। সেখানে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করতে পারেন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)